আসসালামু আলাইকুম আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন, আজকে আমরা আলোচনা করব মানব শরীরের একটি রোগ নিয়ে । রোগটি সাথে আমরা ছোট বড় সকলে পরিচিত। আজকে আলোচনার বিষয় হলো রক্তে এলার্জি কেন হয় এবং রক্ত এলার্জি হলে তা কিভাবে প্রতিকার করা যায়। এলার্জি সমস্যা সকল বয়সের মানুষের হয়ে থাকে। তাই এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য জরুরী একটি বিষয়। আজকে আমরা আপনাদের মাঝে রক্তে এলার্জি কেন হয় এবং রক্তের এলার্জি দূর করার কৌশল গুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি । আপনারা যারা রক্তে এলার্জি সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে ভুগছেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে ।
রক্তে এলার্জি কেন হয়
রক্তের সংবেদনশীলতা নামেও রক্তের এলার্জি পরিচিত । রক্তে এলার্জি কেন হয় রক্তের এলার্জি সমস্যাটা অনেক সময় জন্মগতভাবে হয়ে থাকে । শরীরে যখন হিস্টামিন ও সেরোটোনিন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়ে এলার্জি সৃষ্টি হয়। অনেকের এক্ষেত্রে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যেতে পারে।
রক্তের এলার্জি লক্ষণ গুলো কি কি
সাধারণভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলার্জির সংঘটিত হতে পারে । তবে এগুলোর মধ্যে সাংঘাতিক একটি অ্যালার্জি হল রক্তের এলার্জি। রক্তে এলার্জি কেন হয় এবং রক্তের এলার্জির বেশ কিছু লক্ষণ বোঝা যায় এগুলোর মধ্যে কয়েকটি নাম প্রকাশ করা হলো। তবে উক্ত লক্ষণ গুলো পরিবর্তন তো হতে পারে।
- মাথা ব্যথা
- বমি বমি ভাব হওয়া
- ক্লান্তি
- চোখ হালকা লাল হয়ে যাওয়া
- ত্বকের ফুসকুড়ি
- শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি সৃষ্টি
- শ্বাসকষ্ট
- হাঁপানি
- ঘাট শক্তি কমে যাওয়া
- তলপেটে ব্যথা অনুভব করা
- অতিরিক্ত হাঁচি হওয়া
- গলা চেপে থাকা
রক্তে এলার্জির লক্ষণ গুলো কমানোর উপায়
যদি কোন ব্যক্তির রক্তে এলার্জি হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য সেটা সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিদায়ক । এমতাবস্থায় কোন কাজে সঠিকভাবে মন বসে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এলার্জির লক্ষণগুলো কমিয়ে এর প্রতিকার করা উচিত ।
রক্তে এলার্জির লক্ষণ কমানোর কিছু দিকনির্দেশনা নিচে দেওয়া হল :
- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এলার্জি বান্ধব ডায়েট অনুসরণ করতে হবে
- মানসিক চাপ কমাতে হবে
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
- শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বজায় চেষ্টা করতে হবে
- অ্যালকোহল এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে
- ধুলাবালি থেকে বিরত থাকতে হবে
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এলার্জির ওষুধ সেবন করতে হবে
দীর্ঘ মেয়াদের রক্ত এলার্জির সমাধান কি
রক্তে এলার্জি লক্ষণ দেখা দেয়ার পর আমরা অনেকেই ফার্মেসি থেকে সাধারণ ঔষধ গুলোকে এলার্জি কমানোর চেষ্টা করে থাকি। এক্ষেত্রে সাময়িকভাবে এলার্জি দূর হলেও রক্তে এলার্জির পরিমাণ ঠিক ঐ থেকে যায়। সময় বাড়ার সাথে সাথে এলার্জিগুলো অনেক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে।
এ ধরনের অবস্থায় এ ধরনের অবস্থায় সর্বদা সাথে করে একটি এপিনোফরিন অটো ইঞ্জেক্টর বহন করা উচিত। তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা ঠিক না। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করলে খুব শীঘ্রই দীর্ঘস্থায়ী এলার্জি দূর করা সম্ভব।
অতিরিক্ত রক্তে এলার্জির প্রভাব
স্বাভাবিকভাবে রক্ত এলার্জি শুরু হওয়ার সময় অতিরিক্ত চুলকানি বা অস্বস্তিকর প্রভাব সৃষ্টি হয় না ।
এটি হতে বেশ কিছু সময় লাগে। উক্ত সময়ের মধ্যে যদি কোন চিকিৎসা গ্রহণ করা না হয় তাহলে সেটি আরো জটিল পর্যায়ে চলে যায়।
আসুন দেখে নেই রক্তে অতিরিক্ত এলার্জির প্রভাবে কি কি হতে পারে:
- অতিরিক্ত রক্তে এলার্জির প্রভাব শ্বাস গ্রহণে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিতে পারে
- গলা এবং বুকের চাপ সৃষ্টি হতে পারে
- শরীরের যে কোন স্থানে অতিরিক্ত চুলকানি হতে পারে
- অতিরিক্ত চুলকানি প্রভাবে আবার শরীরের উপরের অংশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- সমস্ত মুখমন্ডল ধীরে ধীরে ফুলে যেতে পারে
- শরীরের মধ্যে একটি ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব চলে আসবে
রক্তের এলার্জি দূর করার উপায়
আমাদের রক্তে যদি এলার্জির উপস্থিতি বুঝতে পারি তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিকারের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। অসচেতনার অভাবে অনেক সময় এলার্জি জটিল এবং কঠিন রূপ ধারণ করতে পারে। এনার্জি দীর্ঘমেয়াদি হলে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যা থেকে শরীরে আরো নানাবিধ জটিল কঠিন রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই এলার্জিকে অবহেলা না করে সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেকে ও বেশ কিছু বিষয়ের উপর সচেতন থেকে রক্তের এলার্জি কমানো যায়, আমরা নিচে কিছু বিষয় সম্পর্কিত আলোচনা করব উক্ত অভ্যাস গুলো গড়ে তোলা আপনি আপনার রক্তের এলার্জি কমে আনতে পারেন।
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা
আমাদের শরীরে যখন রক্তের মধ্যে এলার্জির উপস্থিতি থাকে সেই সময় আমরা যদি অ্যালার্জি কমানোর জন্য কোন প্রতিষ্ঠিত ব্যবহার করে থাকি তা ধূমপানের কারণে সঠিকভাবে কাজ করে না । তাই রক্তে এলার্জির উপস্থিতি থাকা অবস্থায় কোনভাবেই ধূমপান এবং অ্যালকোহলযুক্ত কোন ধরনের পানীয় পান করা যাবে না ।
এলার্জি যুক্ত খাবার পরিহার করা
শরীরে এলার্জি থাকা অবস্থায় আমরা যদি এলার্জিযুক্ত খাবার পরিহার করতে না পারি তাহলে আমাদের এলার্জি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম । কারণ যে সমস্যা আপনি দূর করবেন সে সমস্যায় যদি আপনি ডুবে থাকেন তাহলে সমস্যা থেকে উত্তেরনের কোন সুযোগ নেই , তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন এলার্জিযুক্ত খাবার পরিহার করার।
মাস্ক ব্যবহার করা ও সুগন্ধি পরিহার করা
বাইরের পরিবেশে যাওয়ার সময় মার্কস ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয় এলার্জি রোগীদের জন্য। কারণ বাহিরের ধুলাবালি থেকেও শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও বাহিরে থাকা বিভিন্ন ধরনের এলার্জির যুক্ত সুগন্ধি থেকেও শরীরে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। আমরা অনেকেই জানিনা বডিস্প্রে বা পারফিউমের মধ্যেও এলার্জি থাকে। তাই অবশ্যই লোকাল কোন ধরনের পারফিউম ব্যবহার করবে না। পারফিউম ব্যবহার করার পূর্বে পারফর্মে থাকা উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণ করে নিবেন।
মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা
অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের অ্যালার্জির উপস্থিতি বেড়ে যেতে পারে । এলার্জি থেকে মুক্ত পাবার জন্য মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
কাঁচা খাবার না খাওয়া
আমরা অনেক সময় কাচা দুধ ,কাঁচা ডিম , কাঁচা ছোলা সহ ইত্যাদি কাঁচা খাবার খেয়ে থাকে । যা রক্তে এলার্জি বৃদ্ধি করার জন্য দায়ী। অবশ্যই রক্ত এলার্জির কোন ধরনের লক্ষণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল কাঁচা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কাঁচা লবন না খাওয়া
আমরা খাবারের সাথে অনেকেই কাঁচা লবণ খেয়ে থাকি। রক্তে এলার্জি মুক্তি পাবার জন্য কাঁচা লবণ পরিহার করতে হবে।
ফাস্টফুড না খাওয়া
যুবক-যুবতীদের মধ্যে ফাস্টফুড খাওয়ার অন্য ধরনের একটি তীব্রতা লক্ষ্য করা যায় , অতিরিক্ত ফাস্টফুড কে শরীরে যেমন ওজন বৃদ্ধি পায় তেমনি রক্তে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। শরীরের ওজন কন্ট্রোল রাখতে এবং রক্তের এলার্জির সংক্রমণ দূর করতে ফাস্ট ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ভেজা ও ধুলাবালি জায়গা পরিহার করুন
ধুলাবালি থেকে এলার্জির সৃষ্টি হয় , তাই ধুলাবালি এবং ভেজা স্যাঁতস্যতে এর জায়গা গুলো থেকে দূরে থাকতে হবে ।
নিয়মিত টক দই খাওয়া
টক দই শরীরের এলার্জি দূর করণে ভালো কাজ করে থাকে । তাই নিয়মিত টক দই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
চা পান করা
রক্তে এলার্জির পরিমাণ কমানোর জন্য চা পান করতে পারেন । এক্ষেত্রে চায়ে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করা যাবে না। সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে গ্রিন টি। রক্তের এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ফল মূল্য শাকসবজি খাওয়া
তেলজাতীয় খাদ্য পরিহার করে ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ায় নজর দিতে হবে। তেল জাতীয় খাবারে এলার্জির সংক্রমণ বেশি থাকে।
ভ্যাকসিন ব্যবহার করা
অনেকে আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে রক্ত এলার্জিজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন । তাদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ঔষধ বা সাধারণ অভ্যাসগুলো পালন করেও রক্ত এলার্জি দূর করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হলো ভ্যাকসিন গ্রহণ করা।তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উক্ত ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে, যদিও ভ্যাকসিনের ছোট কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তারপরও যদি দীর্ঘস্থায়ী রক্ত এলার্জি থেকে থাকে তাহলে ব্যবহার করা যেতে পারে । ভ্যাকসিন ব্যবহারের ফলে ২ থেকে তিন মাসের মধ্যে রক্ত এলার্জি কমানো সম্ভব ।
লেখকের ইতিকথা
রক্তে এলার্জি সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে আপনাদের তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি । রক্তে এলার্জি হলে অবশ্যই একটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে । এছাড়াও উপরে দেখানো আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে পারেন। তবে মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ সেবন করা যাবে না।
সর্বোপরি আমাদের ওয়েবসাইট এর সঙ্গে থাকুন । পরবর্তীতে কোন বিষয়ের ওপর জানার আগ্রহ থাকলে তা আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের যেকোনো বিষয়ের ওপর সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। সবার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে আমাদের আর্টিকেলটি এখানে শেষ করছি ।
সুস্থতা থেকে আরও পড়ুন