শরীর ও স্বাস্থ্য

ধানের ভিটামিন ঔষধ এর নাম এবং দাম।

ধান আমাদের দেশের প্রধান ফসল গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ফসল। ধান চাষের মাধ্যমে আমাদের দেশের অনেক মনুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু এই ধান চাষ করতে গিয়ে তাদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।ধানের বীজ থেকে শুরু করে ধানে পোকা ধরা ইত্যাদি আরও সমস্যা রয়েছে। আজকে এই পোস্টে  ধানের ভিটামিন ঔষধ  এর নাম, দাম এবং কোন রোগের কোন ঔষধ লাগবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো। পুরো পোস্ট টি পড়বেন আশা করছি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ এর নাম ।

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ
ধানের ভিটামিন ঔষধ এর নাম ।

ধান আমাদের দেশের একটি অন্যতম প্রধান ফসল। ধান চাষের মাধ্যমে আমাদের দেশের অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আমরা সকলেই জানি যে ধান বাংলাদেশের একটি অর্থকারী ফসল।

এটি বাংলাদেশের প্রধান কৃষি জাত ফসলগুলোর মধ্যে একটি প্রথম সারির কৃষি জাত ফসল। আমাদের দেশের এই ধানের ঘাটতি দেখা দিলে দেশে মুটামুটি ধরনের একটি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। যার ফলে আমাদের দেশে ধান চাষের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না।

আমাদের দেশের কৃষকরা যখন ধান চাষ করে তখন তাদের বিভিন্ন সমস্যার  সম্মুখীন  হতে হয়। যেমন ধান চাষের শুরুতে ভালো ধানের বীজ নির্বাচন, এরপর ধান বোনা  হয়ে গেলে তাতে পোকামাকড়ের প্রকোপের সমস্যা, সেচের সমস্যা এবং ধানের  চারায়  বিভিন্ন ভিটামিনের সমস্যা।

এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য কৃষকদের বিভিন্ন কীটনাশক এবং ভিটামিন ব্যবহার করতে হয়। ধান চাষ করে অধিক ফলন পাওয়ার পিছনে ধানের ভিটামিন ঔষধ এর সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে।

তাই কৃষকরা ধানের বীজ বপন এবং রোপন করা থেকে ধানের চারায় ধান আশা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধানের ভিটামিন ঔষধ ব্যবহার করে থাকে।ধান চাষের জন্য কোন ধানের ভিটামিন ঔষধ গুলো ফসলে ব্যবহার করলে ভালো হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো।

 

ধানের সবচেয়ে ভালো ভিটামিন ঔষধ গুলোঃ

 

১। ফ্লোরা ( Flora ) ভিটামিন।

২। মিরাকুলান ( Miraculan ) ভিটামিন।

৩। বায়োভিটা এক্স ( Bio Vita – X ) ভিটামিন।

৪। অল উইন গোল্ড সুপার ( All win gold super ) ভিটামিন।

৫। ইয়ারাভিটা বায়োট্র্যাক ( Yaravita – Biotrac ) ভিটামিন।

 

এখদনে যে ভিটামিন গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা বর্তমান সময়ে কৃষকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। আপনি চাইলে এই ভিটামিন গুলোর যেকোনো একটি আপনার ফসলে ব্যবহার করতে পারেন।এই ভিটামিন গুলো ব্যাবহার করে এর কার্যকারিতা দেখে আপনি অবাক হবেন।

 

উল্লেখিত ভিটামিন গুলোর ব্যবহার।

 

(১) ফ্লোরা ভিটামিন :

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ
ফ্লোরা ভিটামিন

এটি ১ লিটার পানির সাথে ৩ মিলি গ্রাম ভিটামিন ব্যবহার করতে হবে। এই ভিটামিনটি যখন ধানের চারা রোপন করবেন তার ২০ দিন পরে ব্যবহার করবেন তারপর ধানের চারা রোপনের ৪০ দিন পর এবং চারা রোপনের ৬০ দিন পর।

এই ভিটামিমটি মোট ৩ বার ব্যবহার করবেন। এই ফ্লোরা ভিটামিনটি ব্যবহারের ফলে প্রতিটি চারার মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহনের ক্ষমতা বহু গুনে বৃদ্ধি করে।

তাছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। তাই এই ভিটামিনটি আপনার চাষকৃত ফসলে ধানের ভিটামিন ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

 

(২) মিরাকুলান ভিটামিন :

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ
মিরাকুলান ভিটামিন

মিরাকুলান ভিটামিন ফসলে প্রয়োগ করার ফলে ধানের চারার যখন ধানের চিটা ধরতে শুরু করতে তখন তা ঝরে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।চিটা যখন পূর্নাঙ্গ ধান হতে শুরু করে তখন সে ধান ঝরে পরা থেকেও রক্ষা করে।

তাছাড়া এ মিরাকুল ভিটামিন ব্যবহারের ফলে ধানের চিটা সঠিক সময়ে ধরতে শুরু করে এবং ধানে চিটা থেকে যাওয়ার সমস্যা সমস্যা দূর করে।এটি ১ লিটার পানির সাথে দেড় মিলি গ্রাম ভিটামিন ব্যবহার করতে হবে।

এই ভিটামিনটিও একই ভাবে যখন ধানের চারা রোপন করবেন তার ২০ দিন পরে ব্যবহার করবেন তারপর ধানের চারা রোপনের ৪০ দিন পর এবং চারা রোপনের ৬০ দিন পর। এই ভিটামিমটি মোট ৩ বার ব্যবহার করবেন।

 

(৩) বায়োভিটা এক্স :

 

বায়োভিটা এক্স

এই ভিটামিনটি ধানের চারার বৃদ্ধি এবং অধিক ফসল ফলানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি চাষীদের অতি পরিচিত একটি ভিটামিন।

এই ভিটামিনটি যারা একবার তাদের ফসলে ব্যবহার করেছে তারা খুব ভালো করেই জানেন এই ভিটামিনের কার্যকরীতা সম্পর্কে।এটি প্রতি ১৫ লিটার পানির সাথে ২৫ মিলি গ্রাম ভিটামিন ব্যবহার করতে হবে।

এই ভিটামিনটি যখন ধানের চারা রোপন করবেন তার ২০ থেকে ২৫ দিন পরে ব্যবহার করবেন তারপর ধানের চারা রোপনের ৫০ থেকে ৬০ দিন পর ব্যবহার করবেন । এই ভিটামিমটি মোট ২ বার ব্যবহার করবেন।

 

(৪) অল উইন গোল্ড সুপার :

 

অল উইন গোল্ড সুপার

এই অল উইন গোল্ড সুপার ভিটামিনটিও বায়োভিটা এক্স এর মতো ফসলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছারা অল উইন গোল্ড সুপার ভিটামিনটি শুধু ধান চাষেই নয় আপনি এটি বিভিন্ন শাক সবজি বৃদ্ধিতেও ব্যবহার করতে পারবেন।

এই ভিটামিনটি আপনি এক হেক্টর জমিতে ৭৫০ মিলিগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন।এই ভিটামিনটি ধান চাষের সময় আপনি দুইবার ব্যবহার করবেন।

এটি আপনি ধানের চারা রোপনের ২০ দিন পর প্রথমবার ব্যবহার করবেন এবং যখন ধান চারায় ধানের চিটা ধরতে শুরু করবে তখন ব্যবহার করবেন। এই ভিটামিনটি ব্যবহার করলে আপনি অধিক ফলনে আশা করতে পারেন।

 

(৫) ইয়ারাভিটা বায়োট্র্যাক :

 

ইয়ারাভিটা বায়োট্র্যাক

ইযারাভিটা বায়োট্র্যাক এই ভিটামিনটি ও অধিক ফসল ফলাতে সহায়তা করে। তবে এই ভিটামিনের আলাদা কিছু গুন রয়েছে। কোন শুষ্ক এবং খরা অঞ্চলে যখন ধান চাষ করা হয় তখন দেখা যায় ধানের চারা শুকিয়ে যায় বৃদ্ধি পায় না ফুল দেরিতে আসে।

এই সমস্যা গুলো থেকে ফসলকে বাচানোর জন্য এই ভিটামিনটি ব্যবহার করে।এই ভিটামিনটি প্রয়োগের ফলে ধানের চারা গুলো মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহন শক্তি পায়। তাই আপনি যদি কোন খরা প্রবল অঞ্চলে ধান চাষ করে থাকেন তাহলে এই ভিটামিনটি ব্যবহার করতে পারেন।

এটি প্রতি লিটার পানির জন্য ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ব্যবহার করবেন। এই ভিটামিনটি আপনি ফসলে ২০ দিন পর পর ব্যবহার করতে পারেন। এটি ফসলের গুনগত মান ঠিক রাখতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ এর দাম।

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ
ধানের ভিটামিন ঔষধ এর দাম

উপরে ধানের ভিটামিন ঔষধ গুলোর নাম এবং তা  কিভাবে  ব্যবহার  করতে হয়  সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছি।  এখন  আমরা  জেনে  নিব এই ধানের ভিটামিন ঔষধ গুলোর দাম সম্পর্কে।

 

নিচে ভিটামিনের দাম উল্লেখ করা হলো :

 

১। ফ্লোরা ( Flora ) ভিটামিন :

ফ্লোরা ভিটামিনের ৫ টি আলাদা পরিমানের বোতল রয়েছে।

★ ৫০ মিলি = ৮২ টাকা।

★ ১০০ মিলি = ১৩৮ টাকা

★ ২৫০ মিলি = ২৮০ টাকা।

★ ৫০০ মিলি = ৫২৫ টাকা।

★ ১ লিটার = ১০০০ টাকা।

 

২। মিরাকুলান ( Miraculan ) ভিটামিন :

 

মিরাকুলান ভিটামিনটির একটি বোতল রয়েছে।

★ ১০০ মিলি = ৮৮ টাকা।

 

৩। বায়োভিটা এক্স ( Bio Vita – X ) ভিটামিন:

 

বায়োভিটা এক্স ভিটামিনটির একটি বোতল রয়েছে।

★ ১০০ মিলি = ৫০০ টাকা।

 

৪। অল উইন গোল্ড সুপার ( All win gold super ) ভিটামিন:

 

অল উইন গোল্ড সুপার ভিটামিনটির একটি বোতল রয়েছে।

★ ২৫০ মিলি = ৩৪০ টাকা।

 

৫। ইয়ারাভিটা বায়োট্র্যাক ( Yaravita – Biotrac ) ভিটামিন:

 

ইয়ারাভিটা বায়োট্র্যাক ভিটামিনটির ১ টি বোতল রয়েছে।

★ ২০০ মিলি = ৫০০ টাকা।

 

উপরে ধানের ভিটামিন ঔষধ গুলোর যে দাম উল্লেখ করা হয়েছে তা স্থান এবং সময় বেধে কিছুটা তারমধ্য হতে পারে।

 

ধানের ব্লাস্ট রোগের ঔষধ।

 

ধানের ভিটামিন ঔষধ
ধানের ব্লাস্ট রোগের ঔষধ।

ধান চাষ করতে গিয়ে তার ফসলে ধানের ব্লাস্ট রোগ হয়নি এমন একটি কৃষক ও পাওয়া যাবে না। এটি কৃষকদের অতি পরিচিত একটি রোগ। এটি যেম পরিচিত রোগ তেমনি ফসলের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবও অনেক তীব্র।

ধানের ফসলে ব্লাস্ট রোগটি হলে এটি একটি ধানের চারাকে সম্পূর্ণ নেতিয়ে ফেলতে পারে। এই রোগটি ধানের চারাগাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। তাই ব্লাস্ট রোগটি ফসলের জন্য অতি মারাত্মক একটি রোগ।

এই রোগটি ফসলে চিহ্নিত করার উপায় হচ্ছে, প্রথমে খেয়াল করবেন ধানের চারার পাতার মধ্যে হলুদ রংয়ের ছোট ছোট ক্ষত আকৃতির দাগ দেখা দিবে। এই রোগটি ফসলে যখন তীব্র আকার ধারন করবে তখন ধানের পাতার মধ্যে চোখের মতো আকৃতির হয়ে যাবে এবং মধ্যে খানে গাছের শুকনো পাতার রং ধারন করবে।

এর ফলে ধানর চারার পাতাগুলো মাঝখান থেকে ভেঙে যেতে শুরু করে দেয়। যদি ফসলি জমিতে অল্প রোদ পরে এবং ঘন ঘন বৃষ্টি হয় যার ফলে মাটির আর্দ্রতা কমে যায়। এতে করে (ম্যাগ্নাপারথি গ্রিসা) নাম একটি ছত্রাকের উৎপত্তি ঘটে।

এটি প্রথমে ফসলের গোড়ায় তার পর ধীরে ধীরে পাতায় বাসা বাঁধে। এরপর আস্তে আস্তে ফসলের ক্ষতি করতে শুরু করে। এটা শুরুতে প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে ১০ থেকে ১২ দিন পর পর ধান ক্ষেতের আগাছা গুলো বেছে ফেলে দিতে হবে।

যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে যেমন ঘন ঘন বৃষ্টি পরা জমিতে রোদ না পরা এমন হলে আপনি আগে থেকেই ধানের ভিটামিন ঔষধ ব্যবহার করবেন। ধানের ব্লাস্ট রোগের জন্য আপনাকে কিছু ব্লাস্ট রোগের ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

আপনি নিম্নে উল্লেখতি ঔষধ গুলো ধানের ব্লাস্ট রোগ হলে ব্যবহার করতে পারেন।

ধানের ব্লাস্ট রোগের ঔষধ গুলো হলো :

১। নাটিভো ( Nativo )

2। ট্রুপার ( Truper )

3। ফিলিয়া ( Philiya )

৪। স্টেনজা ( Stenja )

৫। সানফাইটার ( Sun Fighter )

৬। টাটাভো ( Tatavo )

ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে আপনি এই ঔষুধ গুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই ঔষধ গুলোর একটি ব্যবহার করলে বপনি আশানুরূপ সাফল্য পাবেন।

 

পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।

 

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *