শরীর ও স্বাস্থ্য

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা ।

ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। ক্যালসিয়াম আমাদের পেশী, হাড় এবং দাঁত ক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় প্রধান পুষ্টি উপাদান গুলোর একটি। এই পোস্টে ক্যালসিয়াম সম্পর্কে  বিস্তারিত তথ্য জানবো এবং শরীরের জন্য উপকারী ও  উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা  তুলে ধরবো। পুরো পোস্ট টি পড়বেন আশা করছি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

 

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা ।

 

 উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা
উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা

আমাদের শরীরকে পরিচালনা করার জন্য প্রতিদিন সুষম খাবার গ্রহণ অতি প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম হচ্ছে শরীরের প্রধান খনিজ উপাদানের মধ্যে অন্যতম একটি প্রধান উপাদান। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীর চালনা করার প্রধান পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে একটি। তাই শরীরের সকল কার্যকরিতায় ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না।এখন আমরা জানবো কয়েকটি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের নাম এবং উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা নিয়ে ।

 

আমরা অনেক সময় দেখি যে আমাদের শরীরের কোন প্রকার ব্যাথা বা হাত পা ব্যাথা করলে মনে করি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে এমনটি হচ্ছে। তাই আগে পিছনে না দেখে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ক্যালসিয়ামের ঔষধ কিনে এনে সেবন করে থাকি। কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে যে অনেক সহজেই শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরন করা যায় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না।

 

আমরা প্রতিদিন যে খাবার গুলো গ্রহন করে থাকি সে খাবার গুলোতে একজন মানুষের ক্যালসিয়ামে ঘাটতি পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম রয়েছে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই প্রধান খাবার হচ্ছে ভাত। এই ভাত যদি আমরা প্রতিদিন পরিমান মতো গ্রহন বা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি তাহলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম এই ভাত থেকেই আমরা পেয়ে যাবো।তার পাশাপাশি আমাূের অন্য ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারও খেতে হবে।

 

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের নাম।

 

 উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা
উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা ।

প্রতিদিন ভাত এবং আরও কতো গুলো ফল এবং শাক সবজি খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের যোগান দিতে পারি। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন করার জন্য কোন ঔষধ সেবন করতে হবে না। তবে হে কোন মানুষের যদি বয়স বেশি হয়ে যায় তখন দেখা যায় তার দৈনিক যে পরিমান খাবার গ্রহনের প্রয়োজন তা সে গ্রহন করতে পারে না। যার ফলে অল্প খাবার তার শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের যোগান দিতে পারে না। এখন আমরা জানবো কয়েকটি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা নিয়ে ।

 

সে সময় একজন মানুষ ক্যালসিয়ামের যেকোন ভালো মানের ঔষধ সেবন করতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় পূর্ণ বয়স্ক মানুষরাই ঔষধের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের যোগান দিতে চায়। পূর্ন বয়স্ক অবস্থায় এই ক্যালসিয়ামের ঔষধ সেবন করলে হিতে বিপরীত ও হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন করতে হবে। শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম যোগান দিতে হলে আপনাকে জানতে হবে কোন খাবার গুলো আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করতে পারে।

 

তার আগে আমাদের জানতে হবে আমাদের বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন কি পরিমানে ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন শরীরের জন্য কতটুকু ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।

বয়স অনুযায়ী শরীরে প্রতিদিন ক্যালসিয়ামের পরিমান নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

★ কোন শিশুর বয়স যদি ০ দিন থেকে ৬ মাস হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরের একদিনে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।

★ কোন শিশুর বয়স যদি ৭ মাস থেকে ১২ মাস বা এব বছর হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে একদিনে ২৫০ থেকে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়েজন।

★ কোন শিশুর বয়স যদি ১বছর থেকে ৩ বছরের হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে একদিনে ৭০০ থেকে ৭৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়েজন।

★ কোন শিশুর বয়স যদি ৪ বছর থেকে ৮ বছরের হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে একদিনে প্রায় ৯৫০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়েজন।

★ একজন মানুষের বয়স যদি ৯ বছর থেকে ১৮ বছরের হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে একদিনে প্রায় ১২৫০ থেকে ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়েজন।

★ একজন মানুষের বয়স যদি ১৯ বছর থেকে ৭০ বছরের হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে একদিনে প্রায় ১০০০ থেকে ১১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়েজন।

★ একজন মানুষের বয়স যদি ৭০ বছরের বেশি হয়ে থাকে তাহলে তার শরীরে একদিনে প্রায় ১১ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়েজন।

 

আপনার বয়স অনুযায়ী জেনে নিন আপনার শরীরে প্রতিদিন কি পরিমান ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন।

 

এখন আপনাদের সামনে তুল ধরবো কয়েক উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের নাম। কোন কোন খাবার আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরনের ন্যচারাল খাবার। এই খাবার গুলো যদি প্রতিদিন আপনাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন তাহলে আপনাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি নিয়ে ভাবতে হবে।

 

চলুন জেনে নেওয়া ১০ টি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের নামঃ

১। দুধ ( Milk ) – এক কাপ ধুদে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

২। কমলা লেবু ( Orange ) – একটি পূর্ণাঙ সাইজের কমলা লেবুতে ৫৫ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

৩। সয়াবিন ( Soybean ) – ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

৪। মুগডল ( MugDal ) – এক কাপ মুগডালে ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

৫। কাচা ছোলা ( Raw Chickpeas ) – ১০০ গ্রাম কাঁচা ছোলায় ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

৬। খেজুর ( Dates ) – এক কাপ খেজুরের মধ্যে ৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

৭। কিসমিস ( Raisins ) – এক কাপ কিসমিসের মধ্যে প্রায় ৫৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

৮। ডিম ( Egg ) –  শুধু  মাত্র  একটি  ডিমের  মধ্যে  প্রায়  ৭০  মিলিগ্রামেরও  বেশি  ক্যালসিয়াম থাকে।

৯। কাঠবাদাম ( Wood Nuts ) – এক কাপ কাঠবাদামের  মধ্যে  ৬০ মিলিগ্রাম  ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

১০। পনির ( Cheese ) – ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে ৭২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

 

শরীরের জন্য উল্লেখিত খাবার গুলো অতি প্রয়োজনীয় কেননা এই খাবার গুলো শরীরের শুধু ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন করে না প্রোটিন এবং ভিটামিন সি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির চাহিদা পূরন করে থাকে।নিচে আমরা উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত ফল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো।

 

ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এর নাম।

ক্যালসিয়াম যুক্ত ফল।

 

ক্যালসিয়াম যুক্ত ফল।

আমরা জানি আমাদের শরীরের পুষ্টি উপাদান যোগান দেওয়ার অন্যতম প্রধান খাদ্য বিভিন্ন ফল। ফল থেকে আমরা যেমন বিভিন্ন ভিটামিন পেয়ে থাকি ঠিক তেমনি ভাবে ফল আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদাও পূরন করে থাকে। ফল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী  একটি খাবার। নিয়মিত ফল খেলে একটি মানুষের দেহ অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে।

 

তাছাড়া নিয়মিত মানুষ তার খাদ্য তালিকায় যদি একটি ফল রাখতে পারে তাহলে তার শরীরের মধ্যে রোগ বাসা বাধতে সক্ষম হবে না। ফল মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। যার ফলে সহজেই কোন অসুখ বিসুখ গ্রাস করতে পারে না। নিয়মিত ফল খেলে শরীরে প্রতিদিন যে পরিমান ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয় তা অনেকটাই পূরন করতে পারে।

 

তবে হে একটি খাবার শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা কখনোই পূরন করতে পারবে না। শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করার জন্য প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টি খাবার রাখতে হবে। কেন না একজন পূর্ন বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ১০০০ থেকে ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। যা পূরন করতে একটি খাবার কখোনই যথেষ্ট নয়। তাই নিয়ম মাফিক প্রতিদিন ৩/৪ টি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে। তার মধ্যে ফল একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় খাবার। এখন আমরা জানবো উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা নিয়ে।

 

দিনে একটি ফল খেলে প্রায় ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তবে এমন কিছু ফল রয়েছে যা খেলে দিনে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যয়।

 

নিচে কয়েকটি উচ্চ ক্যালসিয়াম ফলের নাম উল্লেখ করা হলোঃ

১। কমলা – একটি কমলার মধ্যে ৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

২। আঙ্গুর – ১০০ গ্রাম আঙ্গুরের মধ্যে ১০ থেকে ১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

৩। ডোমুর – ১০০ গ্রাম ডুমুর ফলের মধ্যে ৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

৪। পেঁপে – ১০০ গ্রাম পেঁপের মধ্যে ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

৫। স্ট্রবেরি – ১০০ গ্রাম স্ট্রবেরির মধ্যে ১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

৬। কলা – ১০০ গ্রাম পেঁপের মধ্যে ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়

 

এই ফল গুলো প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদাও পূরন হয়ে যাবে।

নিচে উচ্চ ক্যালসিয়াম যক্ত সবজির নাম এবং বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

 

ক্যালসিয়াম যুক্ত শাক-সবজি।

 

ক্যালসিয়াম যুক্ত শাক-সবজি।

শাক সবজি এমন খাবার যা অন্যান্য খাবারের তুলনায় যেকোন পুষ্টি উপাদান সবচেয়ে বেশি যোগান দিয়ে থাকে। তাই ডাক্তাররা সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকে যে শাক সবজি বেশি আপনার পৃরতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখবেন। শাকের মধ্যে কি পরিমান ক্যালসিয়াম রয়েছে তা জানলে আপনারা অবাক হবেন। এখন আমরা জানবো উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা নিয়ে।  চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন শাকের মধ্যে কি পরিমান ক্যালসিয়াম বিদ্যমান আছে।

 

নিচে উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত শাকের নাম উল্লেখ করা হলোঃ

 

১। লাল শাক – লাল শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম রয়েছে। লাল শাকে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি শরীরের জন্য আরও বেশ কয়েকটি পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। লালশাক পৃরচুর পরিমান আয়রন সমৃদ্ধ একটি শাক যা মানব দেহের রক্ত শূন্যতা দূর করে। লাল শাকে ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন সি রয়েছে যা আমাদের চোখের জন্য খুব উপকারী। ১০০ গ্রাম লাল শাকের মধ্যে ৩২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

 

২। কচু শাক – কচু শাক মানবদেহের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন এ রয়েছে যা আমাদের চেখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। কচু শাক মানবদেহের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কচুশাক মানব দেহের জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের যোগান দিয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকের মধ্যে ২১৫ থেকে ২৩০ গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

 

৩। সরষে শাক – সরষে শাক সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। সরষে শাক আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি পুষ্টিগত চাহিদা পূরন করে থাকে। সরষে শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন – কে। ভিটামিন কে আমাদের মস্তিষ্ককে পরিষ্কার রাখে। তাছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন এবং সালফার। সরষে শাক আমাদের শরীরের প্রায় ৩০% ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করে থাকে। ১০০ গ্রাম সরষে শাকে ১৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

 

৪। মুলা শাক – আমরা অনেকেই মুলা শাক খেতে চাই না তার কারন মুলা শাকে কোন স্বাদ পাওয়া য়ায় না। তাই এই খাবার টি আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলি। মুলা শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম তার পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি এবং পটাসিয়াম। তাই মুলা শাক মানবদেহে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদানের যোগান দিয়ে থাকে । ১০০ গ্রাম মুলা শাকে ২৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। তাই মুলা শাক আমাদের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি খাবার।

 

৫। পালং শাক – পালং শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী একটি খাবার। পালং শাক খেলে শুধু ক্যালসিয়াম নয় তার পাশাপাশি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আঁশ,আয়রন, ফসফরাস, অক্সালিক এসিড, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং থায়ামিন রয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে মাত্র একটি সবজি জাতীয় খাবার থেকে আপনার শরীরের জন্য কতো গুলো পুষ্টি উপাদান পেয়ে যাবেন। তাছাড়া এই পালং শাক ডায়াবেটিস রোগিরা তাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। ডায়েবিটিস রোগিদের জন্য এই শাকটি অতি প্রয়োজনীয়। ১০০ গ্রাম পালং শাকে ৮২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

 

৬। বকফুল শাক – মানুষের খাবার উপযোগী খাবারের মধ্যে বকফুল শাকে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তবে বকফুল শাক পাওয়া অনেক রেয়ার। এই শাকটি গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায়। বকফুল শাকে আয়রন, মিনারেল, ফাইবার, ফ্যাট এবং প্রোটিনের মতো আরও মানবদেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম বকফুল শাকে ৯০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে যা রিতীমত অবাক করার মতো। তাহলে এই একটি শাক খাওয়ার মাধ্যমেই একজন মানুষের দৈনিক ক্যালসিয়ামর চাহিদা পূরন হয়ে যাবে।

 

৭। কুমড়া শাক – কুমড়া শাক আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করার পাশাপাশি শরীরের আরও অনেক গুলো পুষ্টির চাহিদা পূরন করে থাকে। কুমড়া শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামি এ এবং ভিটামিন সি যা মানুষের ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তাছাড়া চুলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখে এই কুমড়া শাক। তাছাড়া কুমড়া শাক ডায়াবেটিস রেগীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার যা ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের মাত্রা ঠিক রাখে। তবে কুমড়া শাক বাকি উপাদান গুলোর মধ্যে থেকে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেশি পূরন করে থাকে। ১০০ গ্রাম কুমড়া শাকে ২৭১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

 

৮। সজনে পাতা শাক –সজনে পাতা শাক আমাদের শরীরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যোগান দেয়। সজনে পাতাকে বিশেষজ্ঞরা পুষ্টির ডিনামাইট হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। সজনে পাতা শাকে ভিটামিন-সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং জিংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে। এটি শুধু আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করে না। সজনে পাতা শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমানে মিনারেলস থাকে। তবে সজনে পাতা শাকে অন্যান্য উপাদান গুলোর তুলনায় ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশি রয়েছে।১০০ গ্রাম সজনে পাতা শাকের মধ্যে ৩১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

 

৯। মেথি শাক – মেথি শাকও ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি দেহে অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যোগান দিয়ে থাকে। মেথি শাকের মধ্যে রয়েছে আয়রন, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১২ এর মতো প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো। মেথি শাকের মধ্যে এই পুষ্টি উপাদান গুলো ছাড়াও আরও অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে। মেথি শাক আমাদের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণের এবং আমাদপর হার্টকে সুস্থ রাখে এতে করে হার্ট অ্যাটাকপর ঝুঁকি কমে যায়। তবে এই মেথি শাকের মধ্যেও অন্য পুষ্টি উপাদান গুলোর তুলনায় ক্যালসিয়ামের পরিমান বেশি রয়েছে। ১০০ গ্রাম মেথি শাকে ২৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

 

১০। বথুয়া শাক – বথুয়া শাক একটি পরিচিত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ শাক। এ বথুয়া শাক শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এই খাবারটি একজন মানুষের দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। তবে এই বথুয়া শাক ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরনের পাশাপাশি দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বথুয়া শাক খাওয়ার ফলে কিডনি জনিত যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। বথুয়া শাক খাওয়ার ফলে আমাদের হজম শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়।তবে অন্য পুষ্টি গুন থেকে বথুয়া শাক মানবদেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেশি পূরন করে থাকে। ১০০ গ্রাম বথুয়া শাকে ২১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

 

আপনারা এই শাক গুলো নিয়মিত আপনাদের খাদ্য তালিকায় রাখবেন। উপরে যে শাক গুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এই শাক গুলোর যেকোনো একটিও যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন তাহলে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা নিয়ে ভাবতে হবে না। লেখাটি একটু বড় হলেও এখানে আপনি ক্যালসিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। পুরো পোস্ট টি পড়বেন আশা করছি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

 

ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার কি কি ?

 

উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা
ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার কি কি ?

মানবদেহে ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়াম একে অপরের সাথে জড়িত দুটি পুষ্টি উপাদান। ভিটামিন-ডি কে কেন শরীরের জন্য অধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়। কেননা ভিটামিন-ডি আমাদের দেহের যে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া রয়েছে তাতে সরাসরি অংশ গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দেহের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হাড়, অস্থি এবং আমাদের মাসেল এর ক্ষেত্রে ভিটামিন-ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের মস্তিষ্কের ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রেও ভিটামি-ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

ভিটামিন এই কার্যক্রম গুলো ছাড়াও দেহের আরও গুরুত্বপূর্ণ গঠনে সাহায্য করে থাকে। তাই দেহে ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। যার ফলে রোগ বালাই আমাদের দেহে অনেক সহজেই বাসা বাধতে সক্ষম হয়। মানুষের শরীরে যদি ভিটামিন-ডি কমে যায় তাহলে দেহে ক্যালসিয়ামের রিকভারি হওয়া কমে যায়।

 

তাই দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে হলে দেহে ভিটামিন-ডি এর পরিমান ও ঠিক রাখতে হবে। তাছাড়া শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব  দেখা  দিলে  চুল  পড়া  এবং  উচ্চ   রক্তচাপ  বেড়ে  যায়।  তাই আমাদের  দেহে  ভিটামিন  এর   গুরুত্ব   অপরিসীম  ।   এখন  আমরা  জানবো  উচ্চ  ক্যালসিয়াম  যুক্ত  খাবারের  তালিকা নিয়ে।  নিচে  আমরা  জেনে  নিব  ভিটামিন  –  ডি  যুক্ত  কয়েকটি  খাবারের  নাম ।

 

ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলোঃ

১। ধুদ বা ধই – এই দুটি খাবারের একটি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এই ধুদ এবং ধই অনেক ভালো ভিটামিন-ডি এর উৎস।

২। ডিম – ডিম ভিটামিন-ডি এর জন্য অনেক ভালো একটি খাবার।

৩। সামুদ্রিক মাছ- সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন-ডি এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

৪। মাশ্রুম – মাশ্রুম ভিটামিন-ডি এর অনেক ভালো একটি উৎস।

৫। গম – গমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ডি রয়েছে তাই আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় গম দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার রাখতে পারেন।

৬। বাদাম- বাদামেও অধিক পরিমানে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। আপনি প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম গ্রহণ করতে পারেন। বাদাম অনেক সহজেই মানবদেহের ভিটামিন-ডি এর চাহিদা পূরন করতে পারে।

আপনারা উল্লেখিত খাবার গুলো সেবনের পাশাপাশি দিনের বেলা কিছুক্ষণ ১ ঘন্টার মতো রোদের মধ্যে থাকবেন তাহলে আপনার শরীরে ভিটামিন-ডি এর চাহিদা পূরন হয়ে যাবে।

 

পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।

 

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *